---

কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

করোনা ভাইরাস (কোভিড-19) সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ফসল সংগ্রহ বা ব্যবস্থাপনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য দিক নির্দেশনা মেনে চলুন।

আবহাওয়া পরিস্থিতি ও কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

মৌসুমী বায়ুর অক্ষ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।  মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলার অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে  দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। 

দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।         

পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।      

এই পরিস্থিতিতে নিম্নলিখিত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ প্রদান করা হলো:

আউশ ধান:

• রিকভারি থেকে কুশি পর্যায় পর্যন্ত জমির পানির স্তর ৩-৪ ইঞ্চি বজায় রাখুন।
• রোগবালাই এর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।
• আউশ ধানে পানি নেমে যাওয়ার ৫-৭ দিন পর গ্যাপ ফিলিং করে পটাশ সার এবং তার ৩-৫ দিন পর ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ করুন। ধান আগাম কুশি বের হওয়া পর্যায়ে থাকলে এখনই ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যাবে না। ৫-৭ দিন পর প্রয়োজন হলে কুশি ভেঙে গ্যাপ ফিলিং করে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। তবে এখন সব ধরনের জমিতেই বিঘা প্রতি অতিরিক্ত ৫ কেজি পটাশ সার ব্যবহার করা ভাল।
• যদি থ্রিপস ও সবুজ পাতা ফড়িং এর সংখ্যা ২৫% এর বেশী হয় তাহলে ১ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে ম্যালাথিয়ন গ্রুপের বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন। 

আমন ধান:

• আমন ধানের বীজতলা তৈরি করুন।
• বপনের আগে বীজ ডায়থেন এম ৪৫ দিয়ে শোধন করে নিন
• দাপোগ পদ্ধতিতে নার্সারী বেড তৈরি করুন। 

চীনা বাদাম:

• বৃষ্টি না থাকলে পরিপক্ক ফসল সংগ্রহ করুন।
• জমি থকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• রোগ বালাই এর আক্রমণ থেকে রক্ষা  পেতে নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।
• আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে টিক্কা রোগের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হেক্সাকোনাজল অথবা ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে স্প্রে করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন। 

সবজি:

• জমি থকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• পটল, কাকরোল প্রভৃতি সবজির ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাত দিয়ে পরাগায়ন করানো যেতে পারে। নিয়মিত আন্ত:পরিচর্যা করতে হবে।
• গাছের গোড়া ও কান্ডে লেগে থাকা আঠালো কাদা পরিষ্কার পানি স্প্রে করে ধুয়ে ফেলুন। পচে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হারে কপার অক্সিক্লোরাইড মিশিয়ে স্প্রে করুন।
•  টমেটো, মরিচ ও বেগুন গাছ বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেঁধে রাখুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন। 
• বৃষ্টি না থাকলে পরিপক্ক ফসল সংগ্রহ করে নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষণ করুন।

উদ্যান ফসল:

• কলায় সিগাটোকা লীফ স্পট রোগের আক্রমণ দেখা দিলে বেশী আক্রান্ত পাতা কেটে সরিয়ে ফেলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি প্রোপিকোনাজল মিশিয়ে স্প্রে করুন।
• কেটে আনা কলার কাঁদি  শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করুন যেন বৃষ্টিপাতের কারণে রোগের আক্রমণ না হতে পারে।
• ঝোড়ো হাওয়ার কারণে ঢলে পড়া থেকে রক্ষার জন্য কলাগাছ, ফলের ছোট গাছ ও সবজিতে খুঁটির ব্যবস্থা করুন, আখের ঝাড় বেঁধে দিন।
• আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে নারিকেলের বাড রট রোগ দেখা দিতে পারে। ১% বোর্দো মিক্সচার প্রয়োগ করুন।
• ফল বাগান থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য নিষ্কাশন নালার ব্যবস্থা রাখুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন। 

পাট:

• জমি আগাছামুক্ত রাখুন।
• জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• রোগবালাই এর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।
• বিছা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে

• ডিম সংগ্রহ করে ধ্বংস করুন
• আলোক ফাঁদ ব্যবহার করুন
• প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে ইমিডাক্লোপ্রিড মিশিয়ে স্প্রে করুন।

• ঘোড়া পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে ইমিডাক্লোপ্রিড মিশিয়ে স্প্রে করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন। 

 

পান:

• দমকা হাওয়ায় বরজের বেড়া ভেঙে গেলে দ্রুত মেরামত করে নিন।
• নিয়মিত আন্ত:পরিচর্যা করুন।
• শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য পান পাতার বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন। 

আখ:

• বিভিন্ন রোগবালাই এর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। 
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন। 

 

গবাদি পশু:

• পশু খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ধানের খড় সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন ও উচ্চফলনশীল কাঁচা ঘাস লাগান।
• গবাদি পশুকে ক্ষুরা রোগের টিকা দিন।
• গোয়াল ঘরের চারদিক খোলা, শুকনা ও পরিষ্কার রাখুন।
• গোয়ালঘরে  মশারী বা সাবধানতার সাথে কয়েল ব্যবহার করুন।
• বজ্রপাতে প্রাণহানি থেকে রক্ষা পেতে ঝড় বৃষ্টি থেকে গবাদি পশুকে নিরাপদে রাখুন।

হাঁস মুরগী:

• মুরগীকে রানীক্ষেত রোগের টিকা দিন।
• হাঁস মুরগীর ঘরের চারদিক খোলা, শুকনা ও পরিষ্কার রাখুন।
• হাঁস মুরগীর ঘরে মশারী বা সাবধানতার সাথে কয়েল ব্যবহার করুন।​

মৎস্য:

• এখন মাছ মজুদের উপযুক্ত সময়। পুকুর প্রস্তুত করুন।
• পুরাতন সব মাছ পুকুর শুকিয়ে বা রোটেনন (২৫ গ্রাম/শতাংশ/ফুট) প্রয়োগ করে ধরে ফেলুন। ২/৩ দিন পর প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন প্রয়োগ করুন।
• চুন প্রয়োগের ৩/৪ দিন পর সার (প্রতি শতাংশে ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম) প্রয়োগ করুন।
• সার প্রয়োগের ৩/৪ দিন পর পানির রঙ সবুজাভ হলে স্তরভিত্তিক মাছের পোনা মজুদ করুন।