এক নজরে আম চাষ
উন্নত জাতঃ বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪, বারি আম-৫, বারি আম-৬, বারি আম-৭, বারি আম-৮, বারি আম-৯। তাছাড়া এফটিআইপি বাউ আম-১, এফটিআইপি বাউ আম-২, এফটিআইপি বাউ আম-৩, এফটিআইপি বাউ আম-৯, এফটিআইপি বাউ আম-১০। এফটিআইপি বাউ আম -৯ , এফটিআইপি বাউ আম-১০ বছরের যেকোনো সময় লাগানো যায়।
পুষ্টিগুনঃ পাকা আমে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে। তাছাড়া খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২, শর্করা ইত্যাদি রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে রয়েছে ৯০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন , ৭৮ দশমিক ৬ গ্রাম পানি, ২০ গ্রাম শর্করা, ১ গ্রাম আমিষ, শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম স্নেহ, শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম আঁশ, ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম লোহা, ৪১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি ও শূন্য দশমিক ১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১।
বীজের পরিমানঃ প্রতি পিটে ১ টি করে চারা রোপণ করতে হবে ।
বপনের সময়ঃ জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় / ভাদ্র -আশ্বিন (মে-জুন/ আগস্ট-সেপ্টেম্বর)।
চাষপদ্ধতি: চাষ ও মই দিয়ে সমতল এবং আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। চারা থেকে চারা ৮-১০ মিটার দূরে রোপণ করতে হবে , গর্তের আকার হবে ১মি * ১মি *১মি।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
আমের চারা রোপনের জন্যে প্রতি গর্তে নিম্নোক্ত হারে সার দিতে হবেঃ
সারের নাম | প্রতি গর্তে সারের পরিমাণ |
গোবর | ২২ কেজি |
ইউরিয়া | ১৫০ গ্রাম |
টিএসপি | ৫৫০ গ্রাম |
এমওপি | ৩০০ গ্রাম |
জিপসাম | ৩০০ গ্রাম |
জিংক সালফেট | ৬০ গ্রাম |
গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর চারার গোড়ার মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে রোপণ করতে হবে।
একটি পূর্ণ বয়স্ক ফলন্ত আম গাছের জন্য বছরে নিম্নোক্ত হারে সার দিতে হবেঃ
সারের নাম | ফলন্ত গাছে বছর প্রতি সারের পরিমাণ |
গোবর | ৫০ কেজি |
ইউরিয়া | ২ কেজি |
টিএসপি | ১ কেজি |
এমওপি | ৫০০ গ্রাম |
জিপসাম | ৫০০ গ্রাম |
জিংক সালফেট | ২৫ গ্রাম |
উল্লেখিত সার ২ কিস্তি-তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমবার জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে এবং দ্বিতীয়বার আশ্বিন মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচঃ চারা গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। ফলন্ত গাছের বেলায় মুকুল বের হওয়ার ৩ মাস আগে থেকে সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে। আমের মুকুল ফোঁটার শেষ পর্যায়ে ১ম বার এবং ফল মটর দানার আকৃতি ধারণ পর্যায়ে পুনরায় বেসিন পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছাঃ আগাছা গাছের খাদ্যে ভাগ বসায় এতে করে আম গাছের ক্ষতি হয়। গাছের গোড়ায় যাতে করে আগাছা বা অন্য কোন উদ্ভিদ না জন্মাতে পারে সেজন্য গাছের গোড়ার মাটি মাঝে মাঝে কুপিয়ে আলগা করে আগাছা বাছাই করে ফেলতে হবে। আমবাগানে বছরে অন্তত একবার লাঙ্গল দিয়ে ভালোভাবে চাষ করে দিলে আগাছা জন্মাবার সম্ভাবনা কমে যায়। কাচি ও নিড়ানীর সাহায্যে দমন করুন। যায়। জমিতে পানি আটকিয়ে রেখে এ আগাছা দমন করা যায়।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অতিরিক্ত খরায় আম গাছের গোঁড়ায় সকাল বিকাল পর্যাপ্ত পরিমান পানি দিতে হবে। শিলা বৃষ্টিতে চারা গাছ হেলে পড়ে গেলে সোজা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে চারা গাছে খুঁটি বেঁধে দিতে হবে।
পোকামাকড়ঃ
রোগবালাইঃ
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন । ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।
ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ৫০-৬০ কেজি।
সংরক্ষনঃ গরম পানিতে পরিপক্ক কাঁচা আম শোধন করা হলে, আমের গায়ে লেগে থাকা রোগ জীবাণু ও পোকা মুক্ত হবে। গ্রাহকের নিকট অন্য আমের তুলনায় এ শোধিত আমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। মৌসুমে পরিপক্ক পুষ্ট কাঁচা আম গাছ থেকে সাবধানে পেড়ে তা আগে পরিষ্কার পানিতে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কোন পাত্রে ৫২- ৫৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি (পানিতে হাত ডুবালে সহনীয়মাত্রায়) গরম হলে তাতে পরিষ্কার করা আমগুলো ঠিক ৫ মিনিট রেখে এক সাথে উঠিয়ে নিতে হবে। আমের গা থেকে পানি শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক নিয়মে আমগুলো প্যাকিং করে বাজারজাত করতে হবে। এ ব্যবস্থায় আমের জাতের প্রকার ভেদে সাধারন আমের (নন ট্রিটেট) চেয়ে গরম পানিতে শোধন করা আমের আয়ু (সেলফ লাইফ) ১০-১৫ দিন বেড়ে যাবে।
।