এক নজরে পেয়ারা চাষ
উন্নত জাতঃ বারি পেয়ারা-১, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা-১, বাউ পেয়ারা-২, বাউ পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা-৪, বাউ পেয়ারা-৫, বাউ পেয়ারা-৬, বাউ পেয়ারা-৭, বাউ পেয়ারা-৮ এবং স্বরূপ কাঠি ইত্যাদি উচ্চফলনশীল জাত সারাবছর চাষ করা যায়।
পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে ৮১ গ্রাম জলীয় অংশ রয়েছে । তাছাড়া অন্যান্য পুষ্টিগুণ যেমন খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম, আঁশ ৫.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৫১ (কিলোক্যালোরি), আমিষ ০.৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ (মিলিগ্রাম), ক্যারোটিন ১০০ (মাইক্রোগ্রাম), ভিটামিন বি-১ ০.২১ (মিলিগ্রাম), ভিটামিন বি-২ ০.০৯ (মিলিগ্রাম) ও শর্করা ১১.২ গ্রাম ইত্যাদি রয়েছে ।
বপনের সময়ঃ মে-সেপ্টেম্বর/ মধ্য বৈশাখ- মধ্য আশ্বিন
চাষপদ্ধতি: সবদিকে ৬০ সেন্টিমিটার মাপে গর্ত তৈরি করুন। রোপন দুরত্ব হতে পারে ৩-৬ মি × ৩-৬ মি। গর্তে সারের পরিমাণঃ ১০-১৫ কেজি পচা গোবর/কম্পোস্ট, ২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫০ গ্রাম পটাশ সার গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে।
গর্ত ভরাটঃ সার প্রয়োগের পর গর্ত ভরাট করে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে।
চারা/কলম রোপণঃ মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস উপযুক্ত সময়। তবে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে সারাবছরই লাগানো যায়। গর্ত ভরাটের ১০-১৫ দিন পর মাটি উলটপালট পুনরায় গর্ত খনন করতে হবে। প্রথমে পলিথিন সাবধানে ছিড়ে ফেলতে হবে। এবারে বের হয়ে থাকা শিকড় কেটে দিতে হবে। তারপর গর্তে চারা সোজাভাবে স্থাপন করতে হবে। চারার গোড়ার মাটি হালকাভাবে চাপ দিয়ে শক্ত করে দিতে হবে।
বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে চারা কলমের পরিমাণ হেক্টরে ৩০০-৬২৫টি।
সারব্যবস্থাপনাঃ প্রতিবছর ফাল্গুন/ফেব্রুয়ারী মাসে ফুল আসার সময়ে, বৈশাখের শেষে ফল ধরার সময়, মে মাসে এবং ভাদ্র শেষে/ সেপ্টেম্বর মাসে ফল তোলার পর তিন কিস্তিতে সার প্রয়োগ করুন। সার গোড়া থেকে ২.৫ হাত দূর দিয়ে যতদূর পর্যন্ত ডালাপাল বিস্তার করেছে সে পর্যন্ত মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিন। ছকে সারের পরিমাণ দেওয়া হল।
সারের নাম | বয়স (বছর) | গাছ প্রতি সার |
কম্পোস্ট | ১-৩ | ৩-৫ কেজি |
৩-৫ | ৬-১০ কেজি | |
৬ এর উপর | ১২-১৩কেজি | |
ইউরিয়া | ১-৩ | ৫০-৬৭ গ্রাম |
৩-৫ | ৮৪-১৩৪ গ্রাম | |
৬ এর উপর | ১৬৭ গ্রাম | |
টিএসপি | ১-৩ | ৫০-৬৭ গ্রাম |
৩-৫ | ৮৪-১৩৪ গ্রাম | |
৬ এর উপর | ১৬৭ গ্রাম | |
পটাশ | ১-৩ | ৫০-৬৭ গ্রাম |
৩-৫ | ৮৪-১৩৪ গ্রাম | |
৬ এর উপর | ১৬৭ গ্রাম |
গাছে সার প্রয়োগের পর এবং খরার সময় বিশেষ করে ফলের গুটি আসার সময় পানি সেচ দিন। তাছাড়া গোড়ার আগাছা পরিষ্কার ও মাটি ঢেলা ভেঙ্গে দিন। মাটির উর্বরতা ভেদে সারের মাত্রা কম বেশি করুন।
সেচঃ খরিফ মৌসুমে বীজ বপনের আগে খরা হলে সেচ দিয়ে জমিতে জো আসার পর বীজ বপন করতে হবে। জমি একেবারেই শুকিয়ে গেলে হালকা সেচ দিয়ে নিড়ানি দিন।
আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার ও পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। জমির আইল, সেচ নালা আগাছামুক্ত রাখতে হবে। জৈব সার ভালোভাবে পচানো।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি দ্রুত বেড় করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পোকামাকড়ঃ
রোগবালাইঃ
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।
ফলনঃ জাতভেদে হেক্টর প্রতি ফলন ২৮-৩০ টন।
সংগ্রহ ও সংরক্ষনঃ গ্রীষ্মের শেষ থেকে বর্ষার শেষ পর্যন্ত এবং শীতকালে পেয়ারা পাওয়া যায়। পুষ্ট বা ডাসা ফল সাবধানে পাড়তে হবে। পাকা পেয়ারার রং হালকা সবুজ বা হালকা হলুদ হয়। পেয়ারা কোন অবস্থাতেই বেশি পাকতেবেন্না দিবেন না, এতে স্বাদ কমে যায়। উঁচু ডাল থেকে বাশেঁর মাথায় থলে ও আঁকশি লাগিয়ে পেয়ারা পাড়তে হয়। পরিপক্ক পেয়ারা বোঁটা বা দু-একটি পাতাসহ কাটলে বেশি দিন সতেজ থাকে এবং বাজারে দাম বেশি পাওয়া যায়। প্রখর রোদ ও বৃষ্টির সময় পেয়ারা পাড়া উচিৎ নয়। প্রতিটি পেয়ারা গাছ প্রথমের দিকে ৪০০ থেকে ৫০০ টি ফল উৎপন্ন করে। তারপর ৮-১০ বছর পর ৯০০-১০০০ টি ফল উৎপন্ন করে।