এক নজরে বরই চাষ
পুষ্টিগুনঃ কুল বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এবং ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি এর একটি অন্যতম উৎস। তাছাড়া খনিজ পদার্থ, শর্করা, খাদ্য শক্তি, ফসফরাস রয়েছে।
উন্নত জাতঃ বারি কুল ১, বারি কুল ২, বারি কুল ৩, বাউ কুল ১, বাউ কুল ২ এবং বি ইউ কুল-১ ইত্যাদি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত।
বপনের সময়ঃ বাংলাদেশে মধ্য মাঘ-মধ্য চৈত্র ও মধ্য শ্রাবণ মধ্য ভাদ্র পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
চাষপদ্ধতিঃ বাগান আকারে গাছ লাগাতে হলে গভিরভাবে চাষ দিয়ে জমি তৈরি করা উচিত বাড়ির আশে পাশে, পুকুর পাড়ে কিংবা রাস্তার ধারে গাছ লাগালে চাষ না দিয়ে সরাসরি গর্ত করে কুলের চারা লাগানো যায়। গর্তের আকার হবে সোয়া ২ হাত × সোয়া ২ হাত × সোয়া ২ হাত। গর্ত করার পর চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে গর্ত প্রতি ২৫ কেজি পচা গোবর, টিএসটি, পটাশ ও জিপসাম সার প্রতিটি ২৫০ গ্রাম করে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রাখতে হবে।
বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে বীজের পরিমান শতক প্রতি ৩০০-৬২৫টি।
সার ব্যবস্থাপনাঃ ১-২ বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ৫ কেজি, ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ১২৫ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।** ৩-৪ বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ৭.৫ কেজি, ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ২০০ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।** ৫-৬ বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৩৭৫ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ৩৫০ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।** ৭-৮ বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ১২.৫ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ৪২৫ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।** ৯ বা এর বেশি বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ১৫ কেজি, ইউরিয়া ৬২৫ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ৫০০ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন ।*****পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে শাবল দ্বারা গর্ত করে সার প্রয়োগ করুন। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের গোড়া থেকে সোয়া ২ হাত থেকে সোয়া ৩ হাত দূর থেকে শুরু করে ৭.৫ হাত পর্যন্ত জায়গা জুড়ে সার প্রয়োগ করুন।
পোকামাকড়ঃ
রোগবালাইঃ
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।
আগাছাঃ আগাছা গাছের খাদ্যে ভাগ বসায় এতে করে আম গাছের ক্ষতি হয়। গাছের গোড়ায় যাতে করে আগাছা বা অন্য কোন উদ্ভিদ না জন্মাতে পারে সেজন্য গাছের গোড়ার মাটি মাঝে মাঝে কুপিয়ে আলগা করে আগাছা বাছাই করে ফেলতে হবে। বছরে অন্তত একবার লাঙ্গল দিয়ে ভালোভাবে চাষ করে দিলে আগাছা জন্মাবার সম্ভাবনা কমে যায়। কাচি ও নিড়ানীর সাহায্যে দমন করুন। জমিতে পানি আটকিয়ে রেখে এ আগাছা দমন করা যায়।
সেচঃ চারা রোপণের সময় মাটি শুকনো থাকলে মাঝে মাঝে হালকা সেচ দিন। বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে ৮-১০ বার পানির প্রয়োজন হয়। ফলন্ত গাছে শুষ্ক মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) পর্যন্ত ১০-১৫ দিন পর পর পানি সেচের ব্যবস্থা করুন; এতে ফল ঝরা হ্রাস পাবে। ফল বড় হবে ও ফলন বাড়বে। গাছে সার প্রয়োগের পর এবং খরার সময় বিশেষ করে ফলের গুটি আসার সময় সেচ দিন। গোড়ার আগাছা পরিষ্কার ও মাটি ঢেলা ভেঙ্গে দিন।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ পানি যাতে জমি থেকে সরে যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। জমি বুঝে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দেয়া যেতে পারে। চারা গাছ হেলে পড়ে গেলে সোজা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে চারা গাছে খুঁটি বেঁধে দিতে হবে।
ফলনঃ জাতভেদে ৪০- ৬০ কেজি
সংগ্রহঃ জাত অনুসারে মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র (জানুয়ারী থেকে মার্চ) মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিপক্ক অবস্থায় ফল সংগ্রহ করা খুবই জরুরী। অপরিপক্ক ফল আহরণ করা হলে তা কখনোই কাঙ্খিত মানসম্পন্ন হবে না। অতিরিক্ত পাকা ফল নরম ও মলিন রং এর হয়। এতে ফলের সংরক্ষণ গুন নষ্ট হয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ফল যখন হালকা হলুদ বা সোনালী রং ধারণ করবে এবং গন্ধ ও স্বাদ কাঙ্খিত অবস্থায় পৌছবে তখন কুল সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহকালে যাতে ফলের গায়ে ক্ষত না হয় এবং ফেটে না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। সকাল বা বিকেলে ঠান্ডা আবহাওয়া ফল সংগ্রহ করুন।