কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:
করোনা ভাইরাস (কোভিড-19) সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ফসল সংগ্রহ বা ব্যবস্থাপনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য দিক নির্দেশনা মেনে চলুন।
আবহাওয়া পরিস্থিতি ও কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:
উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ জেলার আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৭২ ঘন্টায় দিন এবং রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে নিম্নলিখিত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ প্রদান করা হলো:
বোরো ধান:
- জমিতে প্রয়োজনীয় পানির স্তর বজায় রাখুন।
- ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ট্রুপার/নেটিভো/জিল নামক ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করুন।
- মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলুন, আলোকফাঁদ ব্যবহার করুন, আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করুন।
- পাতা মোড়ানো পোকা দমনে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করুন ও জমিতে পার্চিং করুন। ইউরিয়া সারের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করুন। শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেভিন ৮৫ এসপি, ডার্সবান ২০ ইসি অথবা মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি এর যে কোন একটি অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন।
- থ্রিপস পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত জমিতে নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহার করুন। আক্রমণ বেশি হলে হেক্টরপ্রতি ১.১২ লিটার ম্যালাথিয়ন অথবা ১.৭ কেজি কার্বারিল অথবা ১.১২ কেজি আইসোপ্রোকার্ব/এমআইপিসি প্রয়োগ করুন।
গম:
- চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পর) প্রথম সেচ, শীষ বের হওয়ার সময় (বপনের ৫০-৫৫ দিন পর) দ্বিতীয় সেচ এবং দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) তৃতীয় সেচ প্রদান করুন।
- গমের পাতার মরিচা রোগ দেখা দিলে সাথে সাথে প্রোপিকোনাজল প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে অথবা টেবুকোনাজল প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- গমের জমিতে গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম অথবা কার্বোক্সিন+থিরাম প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
- বৃষ্টির কারণে গমের শীষ ১২-২৪ ঘণ্টা ভেজা ও তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রী সে. অথবা এর অধিক হলে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ হতে পারে। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসেবে শীষ বের হওয়ার সময় একবার এবং ১২-১৫ দিন পর আর একবার প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে নাটিভো ৭৫ ডব্লিউ জি অথবা নভিটা ৭৫ ডব্লিউ জি মিশিয়েজমিতে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
আলু:
- প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ প্রদান করুন।
- কাটুই পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উল্টে পাল্টে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলুন। পোকার উপদ্রব বেশি হলে ফেরোমন ফাঁদ এবং কীড়া দমনের জন্য বিষটোপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া প্রতি লিটার পানির সাথে ক্লোরপাইরিফস ২০ ইসি ৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটিতে স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে।
- বর্তমান আবহাওয়ায় লেট ব্লাইট রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় রোগ প্রতিরোধের জন্য ৭ দিন পর পর ম্যানকোজেব গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগাক্রান্ত হয়ে গেলে আক্রান্ত জমিতে রোগ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে। নিজের বা পার্শ্ববর্তী ক্ষেতে রোগ দেখা দেওয়া মাত্র অনুমোদিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করে গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
সরিষা:
- বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে (গাছে ফুল আসার আগে) প্রথম সেচ এবং ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে (ফল ধরার সময়) দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে।
- সরিষা গাছে ফুল ও ফল আসার সময় জাব পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। আক্রমণ দেখা মাত্র ৫০ গ্রাম নিম বীজ ভেঙে ১ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে ২-৩ গ্রাম গুড়া সাবান মিশিয়ে ছেঁকে ৭ দিন অন্তর ২ বার ছিটাতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকাল ৩ টার পর ১০ দিন অন্তর ২ বার ছিটাতে হবে।
- ঠাণ্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় সরিষায় কান্ড পচা রোগের আক্রমণ হতে পারে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল ২.০ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩ বার (বৃদ্ধি পর্যায়, ফুল ও পড গঠন পর্যায়) প্রয়োগ করুন।
সবজি:
- প্রয়োজন অনুযায়ী হালকা সেচ প্রয়োগ করুন।
- বেগুনে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা দিলে কীড়াসহ আক্রান্ত ডগা কেটে ধ্বংস করুন। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকার বংশবৃদ্ধি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভাব। একান্ত প্রয়োজনে কেবল মাত্র পরিমিত মাত্রায় নির্দিষ্ট ক্ষমতা সম্পন্ন রাসায়নিক কীটনাশক অথবা স্থানীয়ভাবে সুপারিশকৃত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- কুমড়া জাতীয় সবজিতে মাছি পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার করুন। আলফা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
- লাউ জাতীয় সবজিতে পাউডারি মিলডিউ দেখা দিলে হেক্সাকোনাজল অথবা মেনকোজেব প্রয়োগ করুন।
- শিম ও বাঁধাকপিতে জাব পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ক্লোরপাইরিফস গ্রুপের বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করুন।
- মরিচে থ্রিপস পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আঠালো সাদা ফাঁদ (প্রতি হেক্টরে ৪০ টি) ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে ফিপ্রোনিল বা ডাইমেথয়েট ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে স্প্রে করা যেতে পারে।
উদ্যান ফসল:
- ফল বাগানের আন্ত:পরিচর্যা করতে হবে।
- আমের বিভিন্ন পর্যায়ে শোষক পোকা (হপার) এবং এনথ্রাকনোজ রোগের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। মুকুল আসার সময় আক্রমণ হলে ফুল ঝরে যায়। দমনের জন্য মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে প্রতি লিটার পানিতে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড/সিমবুশ/ফেনম/বাসাথ্রিন) ১০ ইসি ১ মিলি এবং টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে একবার এবং তার একমাস পর আরেকবার গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- কলাগাছের পাতায় সিগাটোকা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি স্কোর অথবা ২ গ্রাম নোইন বা ব্যাভিস্টিন অথবা ০.১ মিলি একোনাজল/ফলিকোর মিশিয়ে ১৫-২০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- কলার বিটল পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আইসোপ্রোকার্ব (এমআইপিসি) গ্রুপের বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।
- নারিকেলের মাকড় দমনের জন্য আক্রান্ত গাছের কচি ডাব কেটে পুড়িয়ে ফেলে গাছে মাকড়নাশক প্রয়োগ করতে হবে। এর সাথে আশেপাশের কম বয়সী গাছের কচি পাতাতেও মাকড়নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
- পেয়ারায় মিলিবাগের আক্রমণ হলে অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করুন। প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে গুড়া সাবান মিশিয়ে স্প্রে করেও এ পোকা দমন করা যায়।
- পেয়ারায় ফলের মাছি পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ প্রদান করুন।
গবাদি পশু:
- গবাদি পশুকে খড়ের পাশাপাশি ঘাস, পাতা বা দানাদার খাদ্য বিশেষ করে খৈল ও ডালের ভূষি দিতে হবে।
- রোগ প্রতিরোধে গবাদি পশুকে নিয়মিত টীকা দিন।
- গবাদি পশুর ঘর শুকনা ও পরিষ্কার রাখুন।
- ঠাণ্ডা প্রতিরোধে মেঝেতে বিচালি এবং বাতাস থেকে রক্ষার জন্য কালো পলিথিন বা বস্তা গোয়াল ঘরের চারপাশে ব্যবহার করা যেতে পারে।
হাঁস মুরগী:
- রোগ প্রতিরোধে হাঁস মুরগীকে নিয়মিত টীকা দিন।
- হাঁসমুরগীর ঘর শুকনা ও পরিষ্কার রাখুন।
- বাতাস থেকে রক্ষার জন্য কালো পলিথিন বা বস্তা খোয়াড়ের চারপাশে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মৎস্য:
- বিক্রির উপযোগী বড় মাছ ধরে বিক্রি করুন।
- সকল প্রকার সার প্রয়োগ বন্ধ রাখুন ও খাদ্য প্রয়োগ কমিয়ে দিন।
- পুকুর পাড়ের ডালপালা ও আগাছা পরিস্কার করে পুকুরে পর্যাপ্ত রোদের ব্যবস্থা করুন।
- নতুন করে মাছ মজুদ করা ও অন্য পুকুর বা বিলের পানি প্রবেশ করানো থেকে বিরত থাকুন।
- পিএইচ মান ও পানির গভীরতা অনুযায়ী শতাংশ প্রতি ৩০০-৫০০ গ্রাম চুন ও লবণ প্রয়োগ করুন।
- যথাসম্ভব ভাসমান খাদ্য প্রয়োগ করুন।
- প্রয়োজন ছাড়া জাল টানা যাবে না। প্রয়োজনে জাল কড়া রোদে শুকিয়ে/জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করুন।