করোনা ভাইরাস (কভিড-19) সংক্রমণের জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ

ফসল সংগ্রহ বা ব্যবস্থাপনার সময় কমপক্ষে 1 মিটার (3 ফুট) দূরত্ব বজায় রাখুন, মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধৌত করুন। প্রয়োজনে এলকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছ্ড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধ করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দিকনির্দেশনা মেনে চলুন।

মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।   

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলার অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরণের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও মাঝারী ধরণের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।     

এই পরিস্থিতিতে নিম্নলিখিত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ প্রদান করা হলো।

আউশ ধান:

কুশি থেকে থোড় পর্যায়-

• রোগবালাই এর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।
• পাতার ব্লাস্ট ও দাগ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে স্প্রে করুন।
• যদি থ্রিপস ও সবুজ পাতা ফড়িং এর সংখ্যা ২৫% এর বেশী হয় তাহলে ১ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে ম্যালাথিয়ন গ্রুপের বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
• বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

আমন ধান:

• বীজতলা আগাছামুক্ত রাখুন।
• যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়েছে কাজেই চারা রোপণের জন্য মূল জমি তৈরি শুরু করুন।
• আমন রোপণের জমি প্রস্তুতের শেষ ধাপে প্রতি হেক্টরে ৯০ কেজি টিএসপি, ৭০ কেজি এমওপি, ১১ কেজি জিঙ্ক এবং ৬০ কেজি জিপসাম প্রয়োগ করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর মূল জমিতে ২৫-৩০ দিন বয়সী চারা রোপণ করুন।
• রোপণের আগে চারা ধোয়ার পর শোধন করে নিন।
• চারা খুব গভীরে রোপণ করবেন না। কোন চারা নষ্ট হলে এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানে নতুন চারা লাগান।
• অনুকূল পরিস্থিতিতে ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৯০, ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪, ব্রি ধান৯৫, বিনা ধান ১১, বিনা ধান ১৬, বিনা ধান ২২ জাতসমূহ লাগানো যেতে পারে।
• মাঠে বৃষ্টির সাথে সাথে রৌদ্রের তীব্রতা হ্রাস পাওয়ার কারনে হলুদ মাজরা পোকার আক্রমন দেখা দিতে পারে। আক্রমণ দেখা দিলে অনুমোদিত মাত্রায় কার্বোফুরান স্প্রে করুন।
•  বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

সবজি:

• দমকা হাওয়ায় যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। বর্ষা মৌসুমে নতুন বাগান করুন।
• বেগুনের চারা রোপণের উপযোগী হলে ৬০ সেমি X ৬০ সেমি দূরত্বে চারা রোপণ করুন। বৃষ্টিপাতের পর ঢেঁড়শ, কুমড়া, শশা, ধুন্দুল, লাউ এর বীজ বপন করুন।
• কুমড়া, ঝিঙা, চিচিংগা ও শশায় লাল কুমড়া বিটল এর আক্রমণ হলে ১ লিটার পানিতে ১ মিলি ডাইমেক্রন অথবা রগর মিশিয়ে প্রয়োগ করুন।
• আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে সবজিতে শোষক পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ডাইমেথয়েট অথবা ১.৫ গ্রাম এসিফেট মিশিয়ে স্প্রে করুন। বৃষ্টিপাতের পর টমেটো, বেগুন, মরিচ, লাউ, ঢেঁড়শ লাগান।
• করলার ফুলের গোড়া পচে গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
•  বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

উদ্যান ফসল:

• আম বাগানের আন্ত:পরিচর্যা করতে হবে।
• ডালিমের পাতা পোড়া বা লেবুর লিফ মাইনর প্রভৃতি রোগের জন্য উদ্যান ফসলে বালাই ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
• পেয়ারা বাগানের জন্য গর্তের মাটি নিয়ে ২০-২৫ কেজি গোবর এবং ৫০ গ্রাম হেপ্টাক্লোর মিশিয়ে পুনরায় গর্ত ভরাট করুন। আম, আমলকি, জাম বাগানের জন্য গর্তের মাটি নিয়ে ৩০ কেজি গোবর, ২৫০ গ্রাম এসএসপি এবং ৫০-১০০ গ্রাম হেপ্টাক্লোর মিশিয়ে পুনরায় গর্ত ভরাট করুন।
• যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়েছে কাজেই আম, পেয়ারা ও নারকেল লাগানোর জন্য গর্ত তৈরি করুন।
• কলা গাছ লাগান এবং বাগানে আন্ত:পরিচর্যা করুন।
• বৃষ্টিপাতের কারণে কলা গাছে সার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
• ঝোড়ো হাওয়ার কারণে ঢলে পড়া থেকে রক্ষার জন্য কলাগাছে খুঁটির ব্যবস্থা করুন।
• কলায় সিগাটোকা লীফ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হেক্সাকোনাজল অথবা ১ মিলি প্রোপিকোনাজল মিশিয়ে পাতার দুইপাশে স্প্রে করুন।
• পেঁপের ছাতরা পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।
•  বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

পাট:

• গোড়া পচা, কাণ্ড পচাসহ অন্যান্য রোগ বালাই এর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন।
• জমি আগাছামুক্ত রাখুন।
• যদি পাটের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং সেটা ২/৩ দিনের মধ্যে নিষ্কাশনের সম্ভাবনা না থাকে সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব কর্তনযোগ্য পাট কেটে পানিতে জাগ দিতে হবে।
• আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে পাটে বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। মাঠ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আক্রমণ দেখা দিলে বৃষ্টিপাতের পর প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে ইমিডাক্লোরোপিড/ক্লোরোসাইরিন/নাইট্রো মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
• চেলে পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রতি ৪ লিটার পানিতে ৩ মিলি ডাইক্লোরভস অথবা ১ লিটার পানিতে ২ মিলি এন্ডোসালফান মিশিয়ে বৃষ্টিপাতের পর প্রয়োগ করুন।
•  বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

পান:

• গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে ১% বোর্দো মিক্সচার ব্যবহার করুন।
• বরজের ভেতরে মুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু:

• গবাদি পশুর খুরা রোগ দেখা দিলে-
  • শুধুমাত্র শুকনো খাবার খাওয়ান
  • গোয়ালঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখুন
  • গোয়ালঘরে জীবাণুনাশক যেমন ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করুন
  • পানিতে নিমজ্জিত মাঠে গবাদি পশুকে যেতে দেওয়া যাবে না
  • মুখে ও পায়ে ক্ষত দেখা দিলে ক্ষতের জায়গাটি পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে দিন
• গবাদি পশুকে নিয়মিত টীকা প্রদান করুন।
• যে কোন রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যথাযথ চিকিৎসার জন্য দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হাঁসমুরগী:

• খোয়াড়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করে তারপর হাঁসমুরগী রাখুন।
• চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টীকা প্রদান করুন।
• শুকনো খাবার খেতে দিন এবং পরিষ্কার পানি পান করান।
• বর্তমান আবহাওয়ায় হাঁসমুরগীর অন্ত্রের পরজীবীর আক্রমণ হতে পারে। সেজন্য খোয়াড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

মৎস্য:

• পুকুরের চারধার মেরামত করে দিন যেন মাছ পুকুরের বাইরে বের হয়ে যেতে না পারে।
• পুকুর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিন।
• যথেষ্ট পানি আছে, কাজেই পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ুন।
• পোনা ছাড়ার আগে অপ্রয়োজনীয় মাছ বের করে নিন।
• যে কোন পরামর্শের জন্য স্থানীয় মৎস্য অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখুন।