এক নজরে মরিচ চাষ
উন্নত জাতঃ বারি মরিচ -১, বারি মরিচ-২ এবং বারি মরিচ -৩। বারি মরিচ -১ সারা বছর চাষ করা যায় । বারি মরিচ -২ গ্রীষ্মকালীন এবং বারি মরিচ-৩ শীতকালে চাষ উপযোগী। এছাড়াও সনিক, প্রিমিয়াম, ধুম, মেজর, ডেমন, চন্দ্রমুখী, হটমাস্টার, এম এস ফায়ার, যমুনা প্রভৃতি জাত রয়েছে।
পুষ্টিগুনঃ কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ১০০ গ্রাম মরিচে ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে । তাছাড়া মরিচে নানা রকম পুষ্টিগুন যেমনঃ ১ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৭ গ্রাম আঁশ,১০৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২ গ্রাম আমিষ, ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ মিলিগ্রাম লৌহ, ২৩৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২ ও ২৪ গ্রাম শর্করা ইত্যাদি রয়েছে ।
বপনের সময়ঃ খরিফ-১ মৌসুমে: ১-৩০ ফাল্গুন (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৫ মার্চ)। খরিফ-২ মৌসুমে: শ্রাবণ-ভাদ্র (১৫ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর)। রবি মৌসুমে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর উপযুক্ত সময়।
চাষপদ্ধতিঃ মাটির প্রকার ভেদে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হবে। প্রথম চাষ গভীর হওয়া দরকার। সেচের জন্য ১২ ইঞ্চি প্রশস্ত নালা থাকবে। সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। লাইন থেকে লাইন ২৪ -২৮ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ১২ -১৬ ইঞ্চি দূরে লাগাতে হবে।
বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ১০-১৫ গ্রাম ।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম | শতক প্রতি সার |
গোবর | ৪০ কেজি |
ইউরিয়া | ১.৬ কেজি |
টিএসপি | ১ কেজি |
পটাশ | ৬০০ গ্রাম |
জিপসাম | ২০০ গ্রাম |
গোবর, টিএসপি, জিপসাম ও বোরন সম্পূর্ণ এবং এমওপি ৫০ কেজি শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। সম্পূর্ণ ইউরিয়া এবং বাকী এমওপি সমান ৩ কিস্তিতে ২৫, ৫০ এবং ৭৫ দিন পর পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এমওপি সেচের পূর্বে গাছের গোঁড়া থেকে ১০-১৫ সেমি দূরে প্রয়োগ করে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।
সেচঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেচের পর চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। শীত ও খরার সময় জমিতে ১৫ দিন পর পর পরিমিত পরিমানে সেচ দিতেহবে। ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমান মত আদ্রতা রাখতে হবে ।
আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার। ফসল বোনার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা বাছাই করতে হবে। সেচ দেয়ার আগে আগাছা বাছাই করতে হবে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতিবৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রবি মৌসুমে নিম্ন তাপমাত্রা (১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে) থেকে চারা রক্ষার জন্য বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে।
পোকামাকড়ঃ
রোগবালাইঃ
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন।ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।
ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ৪০-৫০ কেজি।
সংরক্ষনঃ মরিচ শুকানোর পর ছায়াযুক্ত স্থানে ঠান্ডা করতে হবে। ছয় মাস হতে ১ বছর পর্যন্ত মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে টিনের পাত্র, পলিব্যাগ, মাটির পাত্র, ডুলি বা ছালার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। দ্বিস্তরবিশিষ্ট পলিথিনের ব্যাগ ও টিনের পাত্রে পলিথিন দিয়ে মরিচ রাখলে রং ও গুনগত মান ভাল থাকে। সংরক্ষিত মরিচ মাঝে মাঝে রৌদ্রে দিলে ভাল থাকে। মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বোটা যেন মরিচ থেকে আলাদা না হয়, সেদিকে খেয়ার রাখতে হবে।