এক নজরে কলা চাষ
পুষ্টিগুনঃ পাকা কলার প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যাংশে জলীয় অংশ- ৬২.৭ গ্রাম, খনিজ পদার্থ- ০.৯ গ্রাম, আঁশ- ০.৪ গ্রাম, আমিষ- ৭.০ গ্রাম, চর্বি- ০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ১৩.০ মিলিগ্রাম, লৌহ- ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১- ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২- ০.০৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি- ২৪ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি- ১০৯ কিলোক্যালোরি রয়েছে। কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফেট।
উন্নত জাতঃ বারি কলা -১, বারি কলা -২ এবং বারি কলা -৩, বারি কলা – ৪। সারা বছরই চাষ করা যায় । তাছাড়া কিছু স্থানীয় জাত যেমন সবরি , বিচি কলা, আনাজি কলা, মিহের সাগর উল্লেখযোগ্য ।
বপনের সময়ঃ চরম শীত ও বর্ষাকাল ছাড়া বছরের যে কোন সময় কলার চারা লাগানো যায়। তবে চারা লাগানোর সবচেয়ে ভাল সময় হল বর্ষা শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাস। এ সময়ে লাগানো চারার ফলন সবচেয়ে বেশি হয়। এ ছাড়া মাঘ ও বৈশাখ মাসে চারা লাগানো যায়।
চাষপদ্ধতি: চারা রোপণের এক মাস আগে গর্ত করতে হবে। গর্তের আকার হবে = ২ ফুট × ২ ফুট × ২ ফুট। গর্তের মাটির সাথে জৈব সার, টিএসপি ও পটাশ সার মিশিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। চারা রোপণের জন্য অসি তেউড় (Sword Sucker) সবচেয়ে ভাল। অসি তেউড়ের পাতা সরু ও সুচালো, অনেকটা তলোয়ারের মত। গুড়ি বড়, শক্তিশালী, কান্ড ক্রমশ নীচের দিক থেকে উপরের দিকে সরু হয়। তিন মাস বয়সের সুস্থ, সবল তেউর রোগমুক্ত বাগান থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত খাটো জাতের গাছের ৩৫-৪৫ সেমি এবং লম্বা জাতের গাছের ৫০-৬০ সেমি. দৈর্ঘ্যের তেউড় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া টিস্যু কালচারের মাধ্যমে কলার চারা তৈরী করা যায়। গাছের নিচের দিকের স্বাভাবিকভাবে বা বালাইয়ের কারণে মরা পাতা ধারালো হাসুয়া দিয়ে কান্ড বরাবর কেটে ফেলুন। কলার কাঁদি বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গাছের গোঁড়ায় কোন চারা রাখা উচিত নয়।অবাঞ্চিত তেউড় বা সাকার ধারালো হাসুয়া দিয়ে মাটি বরাবর কেটে ফেলুন।
বীজের পরিমানঃ প্রতি মাদায় একটি করে চারা রোপণ করতে হবে ।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম |
সারের পরিমাণ/ গাছ |
প্রয়োগ পদ্ধতি |
জৈব সার |
১৫-২০ কেজি |
পচা গোবর, টিএসপি ও জিপসামের ৫০% জমি তৈরীর শেষ চাষের সময় এবং অবশিষ্ট গোবর, টিএসপি, জিপসাম ও পটাশের ২৫% গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ২৫% ইউরিয়া এবং ২৫% পটাশ মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই মাস পর পর গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম পটাশ ও ৭৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। ফুল আসার পর এর পরিমাণ দ্বিগুন করতে হবে। |
টিএসপি |
৪০০ গ্রাম |
|
এমওপি |
৬০০ গ্রাম |
|
ইউরিয়া |
৫০০-৬০০ গ্রাম |
|
জিপসাম |
২০০-৩০০ গ্রাম |
পোকামাকড়ঃ
জাব পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কলা গাছের কান্ডের উইভিল আক্রমণ কার্বোফুরান জাতীয় কীটনাশক ( যেমনঃ ফুরাডান ৫ জি) ১০ গ্রাম প্রতি গাছের গোড়ার চারপাশে মাটিতে মিশিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিন।
কলার পাতা ও ফলের বিটল দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
রোগবালাইঃ
কলার কৃমি রোগ রোগ দমনে বছরে ৩-৪ বার জমিতে ফুরাডান ৫ জি বা বিস্টারেন ৫জি ৪৫-৬০ কেজি / হেক্টর প্রয়োগ করুন।
কলার সিগাটোকা রোগ দমনের জন্য কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে ।
কলার গুচ্ছমাথা রোগ/ভাইরাস রোগের বাহক পোকা (জাবপোকা) দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
পাতায় হলদে মোজাইক রোগের বাহক পোকা (জাবপোকা) দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
কলার পানামা রোগের ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ গোড়া ও মাটিসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন। আক্রান্ত ক্ষেতে ৩-৪ বছর কলা চাষ করবেন না ।
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন । ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।
আগাছাঃ সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা দমন করুন । চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে রবি মৌসুমে ৫০-৬০ টি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০-৫০ টি চারা রাখা উত্তম।
সেচঃ চারা রোপণের পর মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তখনই সেচ দেয়া উচিৎ । তাছাড়া শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে । বর্ষার সময় কলা বাগানে যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ৫০-৬০ কেজি।
সংরক্ষনঃ কাঁদি কাটার পর শক্ত জাগায় বা মাটিতে রাখলে কলার গায়ে কালো দাগ পড়ে। পাকার সময় সেখানে আগে পচন ধরে। কলা ১৩-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৯৫-১০০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ১৫-২০ দিন কলা সংরক্ষণ করুন। কাঁচা কলা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এভ নিচে রাখবেন না, এতে কলার রং নষ্ট হয়। ২ কেজি পুষ্ট কাঁচা কলা কেটে ১ কেজি কাঠের গুড়াতে ১.৫ লিটার পানিতে আর্দ্র করে তাতে প্রায় ৩০ দিন সংরক্ষণ করতে পারেন। এ ভাবে যেমন পাকানো দেরি করা যায়, তেমনি কলার মান ও রং বজায় থাকে।