বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। দুর্যোগপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও আবহাওয়া ও জলবায়ু, নদ-নদীর পানির অবস্থা, আগাম সতর্কীকরণ সম্পর্কিত তথ্যাদি কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এ দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এ বিষয়ে কারিগরি দিক থেকে উন্নত মানের এবং নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। টেকসই কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের কাছে তাঁদের উপযোগী ভাষায় সরবরাহ করা একান্ত প্রয়োজন। উক্ত তথ্যাদি কৃষি উৎপাদনে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ২০১২ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা একটি কারিগরি সেমিনার আয়োজন করে। উক্ত সেমিনারে অংশগ্রহনকারী দেশী ও বিদেশী বিশেষজ্ঞগণ বাংলাদেশে কৃষি আবহাওয়া সেবার মান তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকরভাবে বৃদ্ধির জন্য তিনটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন-
১। আবহাওয়াবিদ ও কৃষিবিদদের সমন্বয়ে কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি মৌসুমী পূর্বাভাস (Seasonal Forecast), কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবার মান বৃদ্ধি।
২। কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়মিত ও দ্রুত পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
৩। কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবা তৃণমূল পর্যায়ে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে একটি সঠিক সাড়া প্রদান ব্যবস্থার প্রবর্তন।
এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সমন্বয়ে "Bangladesh Weather and Climate Services Regional Project" শীর্ষক একটি প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বর্তমানে সংস্থা তিনটি পৃথক পৃথক ডিপিপি এর মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) কম্পোনেন্ট-সি- “কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প (Agro-Meteorological Information Systems Development Project)” বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পের মেয়াদ: জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য:
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আবহাওয়া এবং নদ নদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত উন্নত মানের এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকের কাছে পৌঁছানো এবং এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের উন্নত পদ্ধতি ব্যবহারে ডিএই’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহ:
১। কৃষি উৎপাদন টেকসই করার লক্ষ্যে কৃষকের কাছে কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহের সাথে কৃষকের খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
২। বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত কৃষি-আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি প্রচলন করা এবং যথোপযুক্ত তথ্য এবং উপাত্ত প্রণয়ন করা।
৩। কৃষি ক্ষেত্রে আবহাওয়া সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য কৃষি আবহাওয়া এবং নদ নদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত তথ্যাদি কৃষকের উপযোগী ভাষায় বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
৪। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণের মাধ্যমে ডিএই’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম:
কম্পোনেন্ট-সি এর তিনটি সাব- কম্পোনেন্ট রয়েছে;
ক) সাব-কম্পোনেন্ট সি-১ : বামিস [BAMIS-Bangladesh Agro-Meteorological Information System (BAMIS)] পোর্টাল স্থাপন
খ) সাব-কম্পোনেন্ট সি-২: প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন
গ) সাব-কম্পোনেন্ট সি-৩: নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত প্রস্ত্ততকরণ এবং তা বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
প্রকল্পের উপকারিতা:
কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা সহজলভ্য করবে। খামার ব্যবস্থাপনায় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তার জন্য কৃষক পর্যায়ে সরাসরি পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও এ সম্পর্কিত পরামর্শ গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় কৃষক পর্যায়ে নিয়মিত ভাবে যথাযথ খামার ব্যবস্থাপনা তথা শস্য পর্যায়, সেচ ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা প্রদান, বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের জন্য আদর্শ সময় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনায় আগাম সতর্কবার্তা প্রদানসহ ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে আন্ত:পরিচর্যা বা কৃষি উপকরণ ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষার জন্যও পরামর্শ প্রদান করা হবে। প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম কৃষকের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, কৃষির উন্নয়ন সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।