ফসল আবহাওয়া তথ্য - সয়াবীন


এক নজরে সয়াবীন চাষ

পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ৪৩ গ্রাম প্রোটিন, ফ্যাটের পরিমাণ ২০ গ্রাম, ৮০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ২৭৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭০৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৩০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি রয়েছে।

উন্নত জাতঃ পিবি -১, বারি সয়াবীন -৪, বারি সয়াবীন -৫, বারি সয়াবীন -৬, বিনা সয়াবিন-১, বিনা সয়াবিন-2, বিনা সয়াবিন-৩, বিনা সয়াবিন-৪ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বপনের সময়ঃ রবিতে পৌষ (মধ্য ডিসেম্বর-মধ্য জানিয়ায়ি) এবং খরিফ – ২ তে শ্রাবণ -ভাদ্র (মধ্য জুলাই -মধ্য সেপ্টেম্বর ) উপযুক্ত সময়।

চাষপদ্ধতি: জমির প্রকারভেদে জমিতে ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে ও আগাছামুক্ত করে বীজ বপন করতে হবে । বীজ লাইনে বপন করা উত্তম । লাইনে বপন করলে রবি মৌসুমে ১২ ইঞ্চি এবং খারিফ মৌসুমে ১৬ ইঞ্চি রাখতে হয় । গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২-৩ ইঞ্চি রাখতে হয় ।

বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ১৬০-৩২৫ গ্রাম।

সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

সারের পরিমাণ/শতক

ইউরিয়া

২৪০ গ্রাম

টিএসপি

৭১০ গ্রাম

পটাশ

৪৯০ গ্রাম

জিপসাম

৪৫০ গ্রাম

বোরন

৪০০ গ্রাম

সবটুকু সার ছিটিয়ে শেষ চাষের সময় জমিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অণুজীব সার প্রয়োগ করলে এক কেজি বীজের মধ্যে ৬৫-৭৫ গ্রাম অণুজীব সার ছিটিয়ে দিয়ে ভালভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে। এই বীজ সাথে সাথে বপন করতে হবে। অণুজীব সার ব্যবহার করলে সাধারণত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।

পোকামাকড়ঃ

ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোথায়ারানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশক (যেমন ভলিউম ফ্লেক্সি ৫ মিলিলিটার অথবা ১মুখ ) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।

বিছাপোকা দমনে ডিম থেকে সদ্য বের হওয়া কীড়াসহ পাতাটি সংগ্রহ করে পোকা মেরে ফেলতে হবে। কীড়া বড় হয়ে সারা জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে এমামেক্টীন বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক ( যেমন প্রোক্লেইম ১০ গ্রাম) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড ১০ তরল অথবা সিমবুশ ১০ তরল ২০ মিলিলিটার / ৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।

জাবপোকা বা সাদামাছি দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।

রোগবালাইঃ

সয়াবিনের উইল্ট রোগ দমনের জন্য আক্রান্ত গাছ অপসারণ করুন। অধিক আক্রমণের ক্ষেত্রে ইপ্রিডিয়োন জাতীয় ছত্রানাশক যেমন রোভরাল ২০ গ্রাম ১০ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে মাটিসহ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন।

সয়াবিনের পাতার রাস্ট রোগ দমনে প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ মিলি/ ১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ।

হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগদমনে জমিতে সাদা মাছি,জাব পোকা দেখা গেলে (বাহক পোকা) ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। সকাল বেলা গাছে ছাই ছিটিয়ে দিলে এই পোকা গাছ থেকে পড়ে যাবে৷ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫দিন পর বাজারজাত করুন।

আগাছাঃ সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা বাছাই ।চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।

সেচঃ প্রথম সেচ বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে(ফুল ধরার পূর্বে এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে (শুটি গঠনের সময়) দিতে হবে।

আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ লাইনে বুনুন, যাতে জমির অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করার নালা রাখা যায়। জমির অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করা ব্যবস্থা রাখুন।

ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ৩-৬ কেজি।

সংরক্ষনঃ পাকা ফল ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে বাছাইকরে পরিষ্কার বস্তায় সংরক্ষণ করতে হবে।